সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:১১ পূর্বাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যন মুশফিকুর রহিম শেষ পর্যন্ত একাই লড়াই করে গেছেন। মুশফিকুর রহিম ১৭৫ রানে অপরাজিত থেকে গেলেন। পাটনারের অভাবে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরির পানে ছোটা হয়নি মুশফিকুর রহিমের। মুশফিকের ডাবলের স্বপ্ন পূরণ হলো না, ১৭৫ রানে অপরাজিতই থেকে গেলেন। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৩৬৫ রানে। ৫২৬মিনিটের ম্যারাথন ইনিংস শেষে ফেরেন হতাশা নিয়ে।
টেস্ট ক্রিকেটের গত সোমবার দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের কাছে প্রথম ঘণ্টা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। দ্বিতীয়বারের মতো টেস্টে এক ইনিংসে ছয় ব্যাটসম্যান আউট হন রানের খাতা খোলার আগে। মুশফিক ও লিটন সেঞ্চুরি করায় একটি বিশ্ব রেকর্ডও হয়ে যায়।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই প্রথম একই ইনিংসে ছয় শূন্যর পাশে দেখা মিলল দুটি সেঞ্চুরির তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন ডাবল সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ১১ নম্বর ব্যাটার এবাদত হোসেনকে স্ট্রাইক দেবেন না বলে ডাবলস নিতে গিয়েই বাধলো বিপত্তি। রানআউট হয়ে গেলেন এবাদত (০)।
মঙ্গলবার প্রথম ঘণ্টায় সাজঘরে ফিরে যান লিটন দাস ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। চাপ সামাল দেওয়ার পর তাইজুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদও আউট হয়ে যান দ্রুত সময়ের মধ্যে। তবু রণে ক্ষান্ত দেননি মুশফিকুর রহিম। শেষ ব্যাটার এবাদত হোসেনকে নিয়েই লড়ে গেছেন নয় ওভারের বেশি, যোগ করেছেন ১৬ রান।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের পরপর ৩৬৫ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। আজ মঙ্গলবার ২৪ মে নতুন সকালের শুরুটা বাংলাদেশ ভালোই করেছিল। কিন্তু বেশিক্ষণ সেটি ধরে রাখতে পারেননি লিটন দাস। দিনের অষ্টম ওভারে সাজঘরের পথ ধরেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলা এ উইকেটরক্ষক ব্যাটার। তার বিদায়ে ভাঙে ২৭২ রানের ইতিহাসগড়া জুটি। লিটন ফেরার পর একই ওভারে আউট হয়ে গেছেন প্রায় সাড়ে তিন বছর পর টেস্ট খেলতে নামা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
আগেরদিনের করা ৫ উইকেটে ২৭৭ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম আধ ঘণ্টায় মুশফিক ও লিটন ছিলেন সাবধানী। এরপর মুহূর্তের জন্য হয়তো লিটনের মনোযোগ নড়ে গিয়েছিল। রাজিথার অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়ায় ধরা পড়েন সিøপে। ভাঙে ৫১৩ বল স্থায়ী ২৭২ রানের জুটি।
ইনিংসের ৯৩তম ওভারের প্রথম বলটি ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে লেন্থ ডেলিভারি। খোঁচা দিতে গিয়ে দ্বিতীয় সিøপে দাঁড়ানো কুশল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়ে যান লিটন। মাত্র ৯ রানের জন্য প্রথমবারের মতো দেড়শ রানের মাইলফলক ছুঁতে পারেননি তিনি। তবে ২৪৬ বলে ১৬ চার ও এক ছয়ে সাজানো ১৪১ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ।
লিটনের বিদায়ের ভেঙেছে ২৭২ রানের জুটি। বাংলাদেশের পক্ষে ষষ্ঠ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটি। সবমিলিয়ে এর চেয়ে বেশি রানের জুটি আছে কেবল দুইটি। ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৫৯ রানের জুটি গড়েন মুশফিক ও সাকিব আল হাসান। একইভাবে বলের সংখ্যায়ও এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। মুশফিক-লিটনের জুটিতে ৩৮৪ মিনিট খেলে মোকাবিলা করেছে ৫১৩ বল।
লিটন ও মুশফিকের জুটি ভাঙার পর তিন বল টিকতে পেরেছেন মোসাদ্দেক। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কট বিহাইন্ড হয়েছেন তিনি। যার সুবাদে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছেন রাজিথা। চট্টগ্রাম টেস্টেও একমাত্র ইনিংসে বোলিং করে চারটি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১৮ বল খেলে ২৬৭ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক ও মোহাম্মদ আশরাফুল। গতবছর একই দলের বিপক্ষে মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর ২৪২ রানের জুটি হয়েছিল ৫১৪ বল খেলে।
বল ও রান- দুই দিক থেকেই টেস্টে এটা বাংলাদেশের তৃতীয় সেরা জুটি। একই ওভারে জোড়া ধাক্কা খেলেও দমে যাননি মুশফিক। বরং লেজের সারির ব্যাটার তাইজুলকে নিয়ে শুরু করেন নতুন লড়াই। উইকেটে আঁকড়ে পড়ে থাকার চেয়ে বরং রানের প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগানোর দিনেই মন দেন মুশফিক। রমেশ মেন্ডিসের করা ৯৯তম ওভারে মুখোমুখি ২৮৪তম বলে গিয়ে প্রথম রিভার্স সুইপ মারেন তিনি, পেয়ে যান বাউন্ডারি।
দুই সেঞ্চুরিয়ানের বাইরে একমাত্র দুই অঙ্ক ছোঁয়া ব্যাটসম্যান তাইজুল করেন ১৫। মুশফিকের সঙ্গে তিনি গড়েন ৪৯ রানের মহামূল্য জুটি। সেই ওভারেই পরের বলে দৃষ্টিনন্দন এক কভার ড্রাইভে ১৪০-র ঘরে ঢুকে যান মুশফিক। প্রবীণ জয়াবিক্রমের পরের ওভারে মুশফিকের পাশাপাশি তাইজুলও হাঁকান বাউন্ডারি। যা স্বস্তির বাতাস বইয়ে দেয় টাইগার শিবিরে। তবে সেই ওভারে দেড়শো হয়নি মুশফিকের, অপেক্ষা করেন ১৪৯ রানে দাঁড়িয়ে।—
রমেশের করা ১০১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অনসাইডে খেলে দ্রুত দুই রান নিয়েই ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মতো দেড়শো ছাড়িয়ে যান মুশফিক। বাংলাদেশের পক্ষে তিনবার দেড়শো ছাড়িয়েছেন মুমিনুল হক, তামিমের রয়েছে দুইটি দেড়শো রানের ইনিংস। এ দুজনের চেয়ে বেশ এগিয়েই রইলেন মুশফিক।
৩০০ আগেই জোড়া ধাক্কা খেলেও, তাইজুলকে নিয়ে মুশফিকের জুটিটি ছিলো দারুণ বোঝাপড়ার ফল। অভিজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে প্রতি ওভারেই তাইজুলকে পরামর্শ দিচ্ছিলেন মুশফিক। এমনকি তাইজুলের উইকেট বাঁচিয়ে রাখার জন্য ওভারের শুরুর দিকে তাকে স্ট্রাইকও দিচ্ছিলেন না এ অভিজ্ঞ ব্যাটার।
বিরতির কিছুক্ষণ পরই অঘটন ঘটে যায়। আসিথা ফার্নান্দোর বাউন্সারে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তাইজুল। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ১৪ রান। তাইজুলের বিদায়ে ভাঙে ৪৯ রানের অষ্টম উইকেট জুটি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ২৭৭/৫) ১১১.২ ওভারে ৩৬৫ (মুশফিক ১৭৫*, লিটন ১৪১, মোসাদ্দেক ০, তাইজুল ১৫, খালেদ ০, ইবাদত ০; রাজিথা ২৮.২-৭-৬৪-৫, আসিথা ২৬-৩-৯৩-৪, জয়াবিক্রমা ৩৮-৯-১০৮-০, রমেশ ১৪-০-৫৩-০, ধনাঞ্জয়া ৬-০-২৭-০, করুনারতেœ ৪-১-৮-০)